ডাউনলোড
শাহ আবদুল করিম : বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার দিরাই উপজেলার ধল আশ্রম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ইব্রাহীম আলী ও মাতার নাম নাইওরজান বিবি। ১৯৫৭ সাল থেকে শাহ আবদুল করিম তাঁর জন্মগ্রামের পাশের উজানধল গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম জীবনের একটি বড় অংশ লড়াই করেছেন দরিদ্রতার সাথে। তবুও তিনি ছিলেন সৎ নির্লোভ প্রকৃতির মানুষ। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময় তার সাহায্যার্থে এগিয়ে আসতে চাইলেও তা তিনি কখনোই গ্রহণ করেননি।দারিদ্র ও জীবন সংগ্রামের মাঝে বড় হওয়া শাহ আবদুল করিমের সঙ্গীত সাধনার শুরু হয়েছিল ছেলেবেলা থেকেই। ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি তার গান কথা বলে সকল অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরূদ্ধে। তিনি তার গানের অনুপ্রেরনা পেয়েছেন প্রখ্যাত বাউলসম্রাট ফকির লালন শাহ, পাঞ্জু শাহ এবং দুদ্দু শাহ এর দর্শন থেকে। যদিও দারিদ্র তাকে বাধ্য করে কৃষিকাজে তার শ্রম ব্যয় করতে কিন্তু কোন কিছু তাকে গান সৃষ্টি করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। তিনি বাউলগানের দীক্ষা লাভ করেছেন নেত্রকোণা জেলার প্রখ্যাত সাধক রশীদ উদ্দিনের কাছে। মুর্শিদ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন দক্ষিণ সুনামগঞ্জের ইব্রাহিম মাস্তানকে। শাহ আবদুল করিম শরীয়তী, মারফতি, দেহতত্ত্ব, গণসংগীতসহ বাউল গান সহ বিভিন্ন গানের চর্চা করেন।স্বশিক্ষিত বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম জীবদ্দশায় পাঁচ শতাধিক গান লিখেছেন এবং সুরারোপ করেছেন।বাংলা একাডেমীর উদ্যোগে তাঁর ১০টি গান ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে।
শাহ আবদুল করিমের জনপ্রিয় কিছু গানঃ
- বন্দে মায়া লাগাইছে, পিরিতি শিখাইছে
- আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম
- গাড়ি চলে না
- রঙ এর দুনিয়া তরে চায় না
- তুমি রাখ কিবা মার
- ঝিলঝিল ঝিলঝিল করেরে ময়ুরপংখী নাও
- তোমার কি দয়া লাগেনা
- আমি মিনতি করিরে
- তোমারও পিরিতে বন্ধু
- সাহস বিনা হয়না কভু প্রেম
- মোদের কি হবেরে ,
- মানুষ হয়ে তালাশ করলে
- আমি বাংলা মায়ের ছেলে
- আমি কূলহারা কলঙ্কিনী
- কেমনে ভুলিবো আমি বাঁচি না তারে ছাড়া
- কোন মেস্তরি নাও বানাইছে
- কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু
- মন মিলে মানুষ মিলে, সময় মিলেনা
- সখী তুরা প্রেম করিওনা
- কাছে নেওনা ,দেখা দেওনা
- মন মজালে,ওরে বাউলা গান
- আমার মাটির পিনজিরাই সোনার ময়নারে
- নতুন প্রেমে মন মজাইয়া
- বসন্ত বাতাসে সইগো
- আইলায় না আইলায় নারে বন্ধু
- মহাজনে বানাইয়াছে ময়ুরপংখী নাও
- আমি তোমার কলের গাড়ি
- সখী কুঞ্জ সাজাও গো
- জিজ্ঞাস করি তোমার কাছে
- যে দুংখ মোর মনে
- হুরু থাকতে,আমরা কত খেইর (খেইল) খেলাইতাম
- হাওয়াই উরে আমার
- গান গাই আমার মনরে বুঝাই
- দুনিয়া মায়ার জালে
- বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের জীবনের অবসান ঘটে ২০০৯ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর। জীবদ্দশায় তাঁর ৭টি গানের বই প্রকাশিত হয়েছে। যথাক্রমে ১) আফতাব সঙ্গীত (১৩৫৫ বাংলা; আনুমানিক ১৯৪৮) গণসঙ্গীত (১৯৫৭) কালনীর ঢেউ (১৩৮৮ বঙ্গাব্দের আশ্বিন; ১৯৮১ সালের সেপ্টেম্বর), ধলমেলা (১৩৯৬ বঙ্গাব্দের ১ ফাল্গুন; ১৯৯০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি), ভাটির চিঠি (১১ বৈশাখ ১৪০৫; ২৪ এপ্রিল ১৯৯৮), কালনীর কূলে (নভেম্বর ২০০১), শাহ আবদুল করিমের রচনাসমগ্র (সংকলন ও গ্রন্থন: শুভেন্দু ইমাম, ২২ মে ২০০৯)
বাউল শাহ আব্দুল করিম ২০০১ সালে একুশে পদক সহ অসংখ্য সম্মাননা ও সংবর্ধনা লাভ করেছেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন-
- একুশে পদক ২০০১
- কথা সাহিত্যিক আবদুর রউফ চৌধুরি পদক (২০০০)
- রাগীব-রাবেয়া সাহিত্য পুরস্কার (২০০০)
- লেবাক এ্যাওয়ার্ড (২০০৩)
- মেরেল প্রথম আলো পুরস্কার আজীবন সম্মাননা (২০০৪)
- সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউটিজ অ্যাওয়ার্ডস আজীবন সম্মাননা (২০০৫)
- বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতি সম্মাননা (২০০৬)
- খান বাহাদুর এহিয়া পদক (২০০৮)
- বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী সম্মাননা (২০০৮)
- হাতিল এ্যাওয়ার্ড (২০০৯)
- এনসিসি ব্যাংক এনএ সম্মাননা (২০০৯)